ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশ্বে এখনো তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। উদ্বেগের ব্যাপার হলো যে পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে, তার কমই পুনর্ব্যবহার হচ্ছে।
বর্তমানে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অনেক চ্যালেঞ্জিং বিশেষ করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির (ক্যাম্প) বাংলাদেশের কক্সাবাজারে। যেখানে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। গাছ কেটে, পাহাড় কেটে ব্যাঙের ছাতার মতো অপরিকল্পিতভাবে ছোট ছোট খুপড়ি ঘড় তৈরি করে আছে তারা।
ক্যাম্পগুলোতে প্রতিদিন কতটা বর্জ্য উৎপাদিত হয় তা স্পষ্ট নয়। তবে টেকনাফের লেদায় অস্থায়ী ক্যাম্পে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ২১ হাজার নাগরিকের ওপর জরিপ করে সমস্যার বিশালতা সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়।
জরিপে দেখা যায়, ওই ক্যাম্পে জৈব, অজৈব এবং পুনর্ব্যবহারের অযোগ্যসহ প্রতিদিন ৩.৩ টন (প্রায় ৯০ মন) বর্জ্য তৈরি হয়। বর্জ্য ফেলার জায়গা বা পুনর্ব্যবহারের জন্য আলাদা স্থানের অভাবে শরণার্থীরা প্লাস্টিকের বোতল ও পলিথিন উন্মুক্তভাবে ফেলে রাখছে।
পলিথিন ব্যাগ ও প্লাস্টিকের বোতলগুলো যেখানে সেখানে উন্মুক্তভাবে ফেলে রাখার অন্যতম উদ্বেগজনক বিষয় হলো এগুলো ক্যাম্পের ড্রেনগুলো (নালা) বন্ধ করে দিচ্ছে। ফলে বৃষ্টির সময় সেখানে পানি জমে মশার প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে।
এদিকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্লাস্টিকের দূষণ কমানোর উপায় সন্ধান করার চেষ্টা করছে তবে তার খুব একটা অগ্রগতি হয়নি।
এমন অবস্থার টেকসই সমাধানে প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশনের সাথে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) টেকনাফের লেদা ক্যাম্পে একটি প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে। চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে প্লান্টটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
‘প্লাস্টিক বর্জ্যকে ক্রমবর্ধমান সমস্যা’ আখ্যায়িত করে আইওএম মুখপাত্র জর্জ ম্যাকলিওড ইউএনবিকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে পরিবেশগত সমস্যা হ্রাসে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করার ওই প্লান্টে- সংগৃহীত বর্জ্য প্রথমে পানিতে পরিষ্কার করা হয়। তারপর টুকরো-টুকরো করে কেটে বিশেষ ব্যবস্থায় গলিয়ে প্লাস্টিকের মন্ড আকারে তৈরি করা হয়। পরবর্তী ধাপে সেগুলো আবার কেটে মেশিনে গলিয়ে ছাঁচের মাধ্যমে বিভিন্ন আকার দেয়া হয়।
প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার কাজী রাশেদ হায়ধার জানান, দেশে এমন একটি ব্যবস্থা দরকার যেখানে মানুষের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি প্লাস্টিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও সহায় হয়।
মানবিক ধারণায় বিদ্যমান অবকাঠামোতে এ ধরনের ব্যবস্থা প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশনের একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প বলেও জানান তিনি।
হায়দার ইউএনবিকে বলেন, ‘এ জাতীয় পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ সব ক্যাম্পের পাশাপাশি স্থানীয় অঞ্চলেও চালু করা উচিত।’
কর্মকর্তারা জানান, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ওই প্লান্টের মাধ্যমে আপতত শুধু আলফাবেট (বর্ণ) ব্লক তৈরি করা হচ্ছে, যা রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এ প্লাস্টিক দিয়ে আরও অনেক কিছু করা সম্ভব।
শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা আইওএম বলছে, অনেক চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের প্লান্ট প্লাস্টিক বর্জ্য হ্রাসে ভালো সমাধান হিসেবে কাজ করবে।